উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে আপনি এই পোস্টটি পড়তে এসেছেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে অবশ্যই আপনি বা আপনার বাড়ির কেউ না কেউ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। আশা করি আপনি এই পোস্টে পড়ার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণগুলো ও প্রতিকার গুলো জানতে পারবেন। আমাদের দেশের অনেক মানুষই আছেন যারা এই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
আর আপনি যদি এই উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণগুলো যদি বুঝতে বা ধরতে না পারেন তাহলে এর প্রতিকার সম্পর্কেও জানতে বা বুঝতে পারবেন না। এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি উচ্চ রক্তচাপ এর লক্ষণ গুলো জানতে পারবেন। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য আমাদের কোন খাবার খাওয়া আমাদের দরকার আর কোন খাবার খেলে আমাদের জন্য ক্ষতিকর তা জানতে পারবেন। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য ওষুধের নাম এবং উচ্চ রক্তচাপ রোগীর খাবার তালিকা ইত্যাদি এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলো কি জানুন
আমাদের মধ্যে অনেকে জানেন না যে উচ্চ রক্তচাপের আরেক নাম হাইপারটেনশন। যখন আমাদের হৃদপিন্ডের ধমনীতে নিতে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বেড়ে যায় তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বলা হয়।
উচ্চ রক্তচাপের ফলে মানুষ হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেল এর মতন অসুস্থ তাই আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত একটা সুস্থ মানুষের রক্তচাপ থাকার কথা ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। যদি এর থেকে রক্তের চাপ বৃদ্ধি পায় তাহলে তখন আমরা একে বলি উচ্চ রক্তচাপ।
উচ্চ রক্তচাপের ছয়টি লক্ষণ জানুন
১. বুক ব্যথা
আমরা জানি যে হৃৎপিণ্ড আমাদের একটি পেশীবহুল অঙ্গ। যদি হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত পাম্প করতে করতে ক্লান্ত বোধ করে তখন আমাদের বুকে ব্যাথা অনুভূতির সৃষ্টি হয়। আমাদের মধ্যে অনেকে বুকের হালকা ব্যাথাকে উপেক্ষা করে যান। কিন্তু এই হালকা ব্যাথা যদি কয়েকদিন ধরে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
২. মাথা ও ঘাড় ব্যথা
উচ্চ রক্তচাপের কারণে কোন সময় মাথা ব্যথা বা ঘাট ব্যাথা করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ যদি অনেক সময় ধরে থাকে তাহলে এর মাধ্যমে আপনার মাথা ব্যাথা বা গার ব্যাথা করতে পারে।
৩. অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া
আপনি যদি বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করার সময় শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। তাহলে বুঝবেন আপনার রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ যখন রক্ত চাপ বৃদ্ধি পায় তখন মানুষের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
৪. দুর্বলতা ও ক্লান্তি
আপনার শরীরে অনেক কারণেই ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব হতে পারে। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের কারণে ও আপনার শরীর দুর্বল ক্লান্ত হতে পারে। কারণ যখন হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত পাম্প দ্রুত হয় তখন শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে শরীরের মতো দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব হয়।
৫. চোখে ঝাপসা দেখা
যখন আপনার শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় তখন আপনার শরীরে অনেক অঙ্গ প্রভাবিত হয়। উচ্চ রক্তচাপের ফলে চোখের রেটিনার রক্তনালি ও প্রভাবিত হয়। এতে করে আপনি আপনার চোখে ঝাপসা দেখতে পারেন।
৬. অস্থিরতা
উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে শরীরের মধ্যে একটি অস্থিরতা কাজ করে। উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন মানসিক চাপও সৃষ্টি হয়। এতে করে শরীরের মধ্যে অস্থিরতা অনুভব হয়।
উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণসমূহ:
উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধির অনেক রকম কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কি কি কারনে আপনার উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে সেগুলো নিচে দেওয়া হলঃ
- শরীরে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি
- খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ খাওয়া
- অতিরিক্ত পরিমান ধূমপান করা
- পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি এবং ফলমূল না খাওয়া
- রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমানো
- অতিরিক্ত মাত্রায় শারীরিক পরিশ্রম করা
উচ্চ রক্তচাপের প্রতিকার। high blood pressure কমানোর উপায়
বর্তমান সময়ে সমাজে দিনে দিনে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। মূলত আমাদের ফাস্টফুড এবং শরীরে ক্ষতি করে এমন অসচেতনীয় খাদ্য অভ্যাসের জন্য উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে। আমি এখন এমন কিছু খাদ্য তালিকার কথা বলব যেগুলো খেলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
রসুন ও আমলকিঃ
আমরা জানি রসুনের মধ্য এলিসিন থাকে যা আমাদের শরীরের নাইট্রিক অক্সিডের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং শরীরের মাংসপেশিকে আরাম প্রদান করে। রসুন খেলে রক্তচাপে দেয়ালেস্টিক এবং সিস্টোলিক আরাম প্রদান করে। এইজন্য খালি পেটে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রতিদিন এক কোয়া রসুন খাওয়া উচিত ।
আমরা জানি যে আমলকি একটি টক জাতীয় ফল। আমলকি ফলে রয়েছে ভিটামিন সি। যা রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে এবং রক্ত চলাচলে সাহায্য করে।
মুলা ও এলাচঃ
মুলা এমন একটি সবজি যা আমাদের প্রতিটা ঘরে রান্না করা হয়। আপনি যদি নিয়মিত মুলা সবজি খেতে পারেন আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মূলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং খনিজ। মুলা হলো উচ্চ সোডিয়াম যুক্ত খাবার তার খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শরীরের উচ্চ রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
অনেক বৈজ্ঞানিকদের মতে আপনি নিয়মিত এলাচ এর খাবার খেতে পারলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এলাচের খাবার খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর মাত্রা বাড়ে যা রক্ত সঞ্চালনের জন্য সাহায্য করে।
গোল মরিচ ও পাতিলেবুঃ
গুড়ো করা গোল মরিচ এর গুড়া হাফ চা চামচ পানিতে মিশিয়ে দুই ঘন্টা অন্তর পান করুন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি কার্যকরী পদ্ধতি।
আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রতিদিন হাফ পাতি লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। আপনি যদি প্রতিদিন এই লেবুর জল দুই ঘন্টা অন্তর অন্তর খেতে পারেন তাহলে অনেক তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।
তুলসী পাতা ও পেঁপেঃ
তুলসী পাতা ও নিমপাতা একসাথে বেটে নিন এবং এই মিশ্রণটি মিনিট কয়েক ভিজিয়ে রাখুন। এই মিশ্রণটি আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাবেন। এভাবে আপনি দীর্ঘ ১৫ দিন খেলে অবশ্যই আপনি ভাল একটি রেজাল্ট পাবেন।
পেঁপে আমাদের গ্রাম গঞ্জের একটি জনপ্রিয় ফল। আমরা অনেকে জানিনা পেঁপে অনেক রোগের কার্যকরী একটি ওষুধ। আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক টুকরা পেঁপে চিবিয়ে খেলে আপনার রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
আদা ও মেথিঃ
আপনারা হয়তো অনেকে জানেন না যে আদাতে রয়েছে কার্যকারী এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরের সর্কারা ও রক্ত চলাচলে সাহায্য করে।
মেথির গুঁড়ো আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন। এভাবে আপনি যদি ১৫ দিন এই মিশ্রণটি পান করতে পারেন তাহলে অবশ্যই একটা ভালো রেজাল্ট পাবেন।
হাঁটাহাঁটিঃ
আপনি যদি সর্বদা শুয়ে বসে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার শরীরে রোগে বাসা বাঁধবে। এজন্যই অবশ্যই আপনাকে প্রতিদিন সকালে খালি পায়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাটা উচিত। এতে করে আপনার শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
হাই ব্লাড প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়
আপনার শরীরে যদি রক্ত চাপের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে শরীরের অনেক রকম জটিলতা দেখা দেয়। আমাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ মাত্রা বেশি তাদের নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য আমরা অনেকজন অনেক কিছু করে থাকি। তাই বড় কিছু খারাপ হওয়ার আগেই বাড়িতে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলার চেষ্টা করবেন।
এতে করে অনেক সমস্যার সমাধান হবে এবং আপনি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারবেন। আপনাকে মূলত যেসব খাদ্যের মধ্যে রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এই খাদ্যগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে।
যেমন : চিনি, লবণ,কেক,ময়দা,বার্গার,সাদা পাউরুটি ইত্যাদি এই খাবারগুলো খাওয়া ত্যাগ করতে হবে।
এত করে আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং আপনার রক্তচাপ কম থাকবে। যদি আপনার শরীরের ওজন অনেক বেশি থাকে তাহলে আপনি নিয়মিত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট শরীরচর্চা করবেন। এতে করে আপনার ওজন কমবে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক হবে।
বেশি লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ভাতে ও তরকারিতে লবণ কম খাওয়া চেষ্টা করতে হবে। আপনারা চেষ্টা করবেন যেন পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খেতে। কারণ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য পটাশিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি দ্রব্য। তাই খাদ্য তালিকার মধ্যে কলা, টমেটো,রাঙানো আলু,ছোট মাছ, বাদাম, দই রাখুন।
আর আপনার যদি ধূমপানের মতন খারাপ অভ্যাস থাকে তাহলে একে অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কারণ এতে রয়েছে নিকোটিনের মতন মারাত্মক ক্ষতিকার জিনিস।
শেষ কথা
উচ্চ রক্তচাপ এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আশা করি আপনাদের সঠিক তথ্যটি প্রদান করতে পেরেছি। আপনি যদি এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই একটা শেয়ার করে দিতে পারেন।
Post Comment